কমে আসছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ! - মুক্ত আকাশ
    বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ০২:৫১ অপরাহ্ন
    শিরোনাম:
    বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি এড়িয়ে যায় মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বৃহস্পতিবার থেকে রাজনৈতিক দলের সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শুরু চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ১৭ মামলার আসামি সাজ্জাদের স্ত্রীর সংখ্যা ২৫ যুদ্ধ বিরতির মধ্যেই ঘরে ফেরা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের হামলা ফ্যাসিস্ট হাসিনার নামে বেনামে আরও ৩১ ব্যংকে হিসাব জব্দের নির্দেশ ভারতীয় করোনার টিকা আমদানি করে ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে উপদেষ্টারা গনঅভ্যুত্থান নিয়ে বিভাজনরেখা তৈরি করছেন: রিজভী বাংলাদেশে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছে চীন পুলিশকে অবহেলা করে কিংবা পাশ কাটিয়ে গিয়ে দেশ গড়তে পারবো না ডিবি হেফাজতে নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে

    কমে আসছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ!

    • Update Time : শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৩
    • ৩০ Time View

    বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া লহামারি করোনা ভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামল দিলেও এখন পর্যন্ত জাতীয় অর্থনীতির ওপর থেকে অশনিসংকেত কাটেনি। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক হলেও কমে আসছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ডলার সংকটের সুরাহা না হওয়ায় জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার জটিলতা দূর হয়নি।

    কৃষি উৎপাদনে ইতিবাচক পরিস্থিতির বিপরীতে ব্যবসা-বাণিজ্যে ফেরেনি স্বাভাবিক গতি। সেই সঙ্গে আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উৎপাদনশীল খাতের বিকাশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নেই বড় ধরনের অগ্রগতি। সব মিলিয়ে অর্থনীতির চলমান সংকট থেকে সহসাই বেরিয়ে আসার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।

    করোনা মহামারির ধাক্কার পর নানামুখী সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গত অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ। সাময়িক হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে এই প্রবৃদ্ধিই হতে পারত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বড় নিদর্শন। কিন্তু বাদ সাধে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার প্রভাবে জ্বালানি, খাদ্য, শিল্পের কাঁচামালসহ সব পণ্যের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার দ্রুত অবমূল্যায়ন, বৈদেশিক মুদ্রার একের পর সংকটে বিপর্যস্ত হয় দেশের অর্থনীতি।

    বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান অনিশ্চয়তা সহসাই কাটছে না। কোনো কোনো দেশে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হলেও সার্বিকভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট ও আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলা নিয়ে জটিলতা। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ঘাটতি বেড়েছে। সেই সঙ্গে যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট, গ্যাস সরবরাহে অনিশ্চয়তা, সরকারের ব্যাংকঋণ বৃদ্ধি, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে লাগাম টেনে ধরা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে স্থবিরতা, শিল্প খাতে পুঁজিপ্রবাহ হ্রাস, পুঁজিবাজারের নিম্নগতি এবং মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমে যাওয়ায় অর্থনীতি স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। এসব প্রবণতা মূল্যস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলায় সাধারণ মানুষের আয়-ব্যয়ের মধ্যে তৈরি হয়েছে বড় রকমের পার্থক্য।

    তার ওপর বাজেট ঘাটতি কমাতে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্ত অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে কোনো ভূমিকা রাখবে কি না—এমন প্রশ্নও বড় হয়ে উঠছে। আবার দাম বাড়ানো হলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। শিল্প খাতে এখনো গ্যাস সংকট চলছে। শীতে চাহিদা কম থাকায় আপাতত লোডশেডিং কমলেও ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও বিদ্যুৎ সমস্যা প্রকট হতে পারে।

    কালবেলা পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    অন্যদিকে, বড় আকারের বাজেট ঘোষণা করলেও তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে সরকার। কারণ, পরিকল্পনা মতো রাজস্ব আয় বাড়েনি। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা পিছিয়ে আছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই সময়ে সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। প্রকৃত আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৬২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

    কাঙ্ক্ষিত হারে আয় না বাড়লেও সরকারের ব্যয় অনেকটাই বেড়ে গেছে। ফলে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ঋণনির্ভরতা বেড়েছে। কিন্তু সরকারের ঋণের অন্যতম উৎস সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা।

    এর বিপরীতে পুরোনো সঞ্চয় ও সুদ হিসেবে বিনিয়োগকারীরা তুলে নিয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয় হয়েছে বেশি। এ কারণে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। এ সময় সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছে ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা।

    ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সরকারের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেসরকারি খাতের ঋণে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু নভেম্বর পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

    সরকার ঋণ করে বাজেট ব্যয় সামাল দিলেও দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও প্রকৃত আয় কমবে।

    সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত অনেক দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছে। তবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার যেভাবে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নিচ্ছে, তা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে ব্যাংকে তারল্য সংকট তৈরি হবে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ কমে যাবে, যা প্রবৃদ্ধিকে আঘাত করতে পারে।

    তিনি বলেন, অর্থনীতির স্বার্থেই সরকারকে ব্যাংক ঋণনির্ভরতা কমাতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। বাংলাদেশে রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের তুলনায় খারাপ। এ অবস্থা বদলানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।

    এদিকে, বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান মন্দার মধ্যেই রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে ২ হাজার ৭২২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৩৭ কোটি ডলার, যা এক মাসের রপ্তানি আয়ের হিসাবে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪৯ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৪ কোটি ডলার। সেই হিসাবে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আগের বছরের তুলনায় ২৮ কোটি ৭ লাখ ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।

    অন্যদিকে, কম প্রয়োজনীয় ও বিলাস পণ্য নিরুৎসাহিত করার পরও সার্বিক আমদানি ব্যয় বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২৫৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেনে বড় রকমের ঘাটতি রয়েই গেছে। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বৈদেশিক বাণিজ্য (ব্যালেন্স অব ট্রেড) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭৯ কোটি ডলার। একই সময়ে বৈদেশিক লেনদেনে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৩৮ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এই ঘাটতির পরিমাণ ৪৩৬ কোটি ডলার বেশি। লেনদেনের ঘাটতির প্রভাবে ৩২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

    Please Share This Post in Your Social Media

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    More News Of This Category
    © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: CloudVai-ক্লাউড ভাই