করোনার টিকা ব্যয়ে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা গরমিল; টিআইবি - মুক্ত আকাশ
    শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন
    শিরোনাম:
    চট্টগ্রামে যুবদল-ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ২ জন গুলিবিদ্ধ, ওসি প্রত্যাহার চট্টগ্রামে বন্য হাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলতে পারে: মির্জা ফখরুল লেবার পার্টি ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক চলছে নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে এমন কোন শঙ্কা নেই আ,লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারি জামায়াতের আ,লীগকে রাজনীতিতে ফেরাতে একাধিক রাজনৈতিক দল তৎপর আ,লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা কোন অপরাধের সাথে জড়িত নয়,তাদের রাজনীতিতে বাধা নেই গাজায় ইসরায়েলি হামলার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হিথ্রো বিমানবন্দরের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

    করোনার টিকা ব্যয়ে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা গরমিল; টিআইবি

    • Update Time : মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০২২
    • ৩৮ Time View

    করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের নেয়া টিকা কার্যক্রমে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচের কথা বলা হলেও টিকার প্রাক্কলিত ক্রয়মূল্য ও টিকা ব্যবস্থাপনার প্রাক্কলিত মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা থেকে ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। যা স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রদত্ত হিসাবের অর্ধেকেরও কম। ফলে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার গরমিল রয়েছে।

    করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলায় সুশাসন: অন্তর্ভুক্তি ও স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে। গবেষণাটি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

    ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত গবেষণাটি করা হয়। গবেষণার অংশ হিসেবে ৪৩টি জেলায় ১০৫টি টিকা কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা হয়। যার মধ্যে ৬০টি অস্থায়ী এবং ৪৫টি স্থায়ী টিকা কেন্দ্র ছিল।

    এছাড়া ৪৩ জেলার ৪৮টি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৬৭১ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে এই গবেষণায়। অন্যদিকে কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে।

    গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে সরকারিভাবে ক্রয় করা হয়েছে প্রায় ৯.২ কোটি ডোজ, কোভ্যাক্স কস্ট শেয়ারিং এর মাধ্যমে ৮.৭ কোটি ডোজ টিকা ক্রয় এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ও কোভ্যাক্স থেকে অনুদানের মাধ্যমে প্রায় ১১.৭ কোটি ডোজ টিকা বিনা মূল্যে পাওয়া গিয়েছে। এক্ষেত্রে কোভিশিল্ড প্রতিডোজ ৫ ডলার (৪২৫ টাকা), সিনোফার্ম ১০ ডলার (৮৫০ টাকা) এবং কোভ্যাক্স কস্ট শেয়ারিং ৫.৫ ডলার (৪৬৭.৫ টাকা) হিসাবে ধরে আনুমানিক টিকার খরচ দাঁড়ায় ১১ হাজার ২৫৪.৪ কোটি টাকা। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমে তাঁর বক্তব্যে কোভিড-১৯ টিকা ক্রয়ে ব্যয় ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি বলে উল্লেখ করেন।

    অন্যদিকে ২০২১ সালের জুলাই মাসে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে টিকা প্রতি ৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১০ মার্চ গণমাধ্যমে টিকা কার্যক্রমে মোট ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। সরকারি তথ্যমতে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত মোট ২৪.৩৬ কোটি ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের টিকা পরিকল্পনায় টিকা কার্যক্রম সম্পর্কিত ব্যয় টিকা প্রতি দুই ডলার (১৭০ টাকা) হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া কোভ্যাক্স রেডিনেস অ্যান্ড ডেলিভারি ওয়ার্কিং গ্রুপের নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশের টিকা কার্যক্রম সম্পর্কিত ব্যয়ের মডেল করা হয়। যেখানে একটি দেশের টিকা কার্যক্রমে বিদ্যমান অবকাঠামো ও জনবল ব্যবহার এবং আউটরিচ কেন্দ্রের অনুপাত বিবেচনায় টিকা ক্রয়ের পর থেকে মানুষকে টিকা দেওয়া পর্যন্ত সকল ব্যয় হিসাব করে টিকা প্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ০.৮৪ ডলার (৭১.৪ টাকা) থেকে ০২.৬৪ ডলার (২২৪.৪ টাকা)। সেই হিসাবে টিকা কার্যক্রম সংক্রান্ত ব্যয়ের প্রাক্কলিত পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৩৯.৬ কোটি টাকা থেকে ৫ হাজার ৪৬৭.৩ কোটি টাকার মধ্যে। উল্লিখিত টিকার প্রাক্কলিত ক্রয়মূল্য ও টিকা ব্যবস্থাপনার প্রাক্কলিত মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা থেকে ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। যা স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রদত্ত হিসাবের অর্ধেকেরও কম। শুধু একটি দেশের ক্ষেত্রে টিকার ক্রয়মূল্য প্রকাশ না করার শর্ত থাকলেও অন্যান্য উৎস থেকে কেনা টিকার ব্যয় এবং টিকা কার্যক্রমে কোন কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।

    গবেষণা প্রতিবেদনে টিকা কার্যক্রমের বেশ কিছু ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়। টিকা গ্রহণের সময় ২ শতাংশ সেবাগ্রহীতা অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সময়ক্ষেপণ, টিকা কেন্দ্রে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সুবিধা দেওয়া, দুর্ব্যবহার এবং কিছু কেন্দ্রে টিকা থাকা সত্ত্বেও টিকা কেন্দ্র থেকে টিকাগ্রহীতাদের ফিরিয়ে দেওয়া উল্লেখযোগ্য।

    টিকা কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে যথাসময়ে বা দ্রুত টিকা পেতে ১০.১ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে গড়ে ৬৯ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। এছাড়া প্রবাসীরা টিকার নিবন্ধনের জন্য বিএমইটি নম্বর পেতে ১৫০-২০০ টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে। দু’একটি কেন্দ্রে নিয়ম- বহির্ভূতভাবে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে পছন্দ অনুযায়ী টিকা প্রদান করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে টিকা না নিয়েও টাকার বিনিময়ে প্রবাসীরা টিকা সনদ সংগ্রহ করতে হয়েছে।

    একটি গ্রুপ ফেসবুক পেজে প্রবাসীদের চাহিদা অনুযায়ী টাকার বিনিময়ে টিকা সার্টিফিকেট দেওয়ার বিষয়ে প্রচার করতে দেখা গেছে।

    টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, টিকা কার্যক্রমে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যন্য দেশগুলোর তুলনায় আমরা এগিয়ে রয়েছি। সার্কভুক্ত দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান তৃতীয়। এটি একটি ইতিবাচক দিক। তবে টিকা কার্যক্রমের বেশকিছু ঘাটতি রয়েছে।

    তিনি বলেন, আমাদের এই গবেষণায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরেছি। জাতীয় পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল দুর্গম এলাকার, বস্তিবাসি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হবে। তাদের ক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ টিকা দেয়া হবে। কিন্তু তাদের নিয়ে বাস্তবে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম দেখা যায়নি। এ কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর টিকা প্রাপ্তির হার জাতীয় হারের তুলনায় অনেক কম। এটা উদ্বেগের বিষয়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছে। যে সমস্ত এলাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাস, সেই এলাকায় উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম প্রচার প্রচারণায় ঘাটতি ছিল। তিনি বলেন, নারী ও প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে অনেক কেন্দ্রেই বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যেটি উল্লেখযোগ্য ঘাটতি।

    তিনি বলেন, টিকা ব্যয়ে স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোটাদাগে কয়েকটি ব্যয়ের কথা বলেছেন। টিকা ব্যয়ের কোন সুনির্দিষ্ট নির্ভরযোগ্য তথ্য জানানো হয়নি। এজন্য আমাদেরকে সরকারি সূত্রের বাইরে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের উপর নির্ভর করতে হয়েছে।

    স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিডিয়ায় টিকা বাবদ ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচের কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা বিশ্লেষণ করে পেয়েছি, টিকা ক্রয় ও ব্যবস্থাপনাসহ ১৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। টিকার ক্ষেত্রে গোপনীয়তার সংস্কৃতি চলছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ না থাকলে দুর্নীতির সুযোগ থাকে। একটি দেশের সাথে চুক্তি করা হয়েছে টিকার মূল্য গোপন রাখতে হবে। কিন্তু অন্যান্য তথ্যগুলোও দেয়া হচ্ছে না। ফলে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে।

    Please Share This Post in Your Social Media

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    More News Of This Category
    © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: CloudVai-ক্লাউড ভাই