চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন আমবাগান এলাকায় এক মাদক ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ার দিয়েও সমাজ থেকে নির্মুল করা যাচ্ছে না দেশে আলোচিত যুবসমাজ ধ্বংসের মরন ছোবল মাদক ব্যবসা!
চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন ১৩, নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের নাকের ডগায় নির্বিঘ্নে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং লিডাররা চালিয়ে যাচ্ছে এসব মাদক ব্যবসা!
আবার এসব এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কিশোর গ্যাং গুলোর নেতৃত্ব দেওয়া বড় ভাইয়েরা পর্দার আড়ালে থেকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কোমলমতি এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে তুলে দেয় আগ্নেয়াস্ত্র!
খুলশী থানার আওতায় পড়া নগরীর ১৩, নং পাহাড়তলী ওয়ার্ড ও ১৪, নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় এসব মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাংয়ের লিডাররা নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন কলকারখানা সাপ্তাহিক ছুটির বন্ধের কারনে বাহিরের এলাকা থেকে কিশোর ও ২০/২২ বছরের কিশোর অপরাধে জড়িত বহিরাগত অপরাধীদর এনে জড়ো করে লিপ্ত হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ!
চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অপরাধে জড়িতরা নিজেদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে বেঁচে নেয় ঘনবসতি পূর্ণ এই ওয়ার্ডটিকে।
অন্যদিকে ১৩, নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা রেলওয়ে সরকারি কর্মচারীদের আবাসন হিসাবে থাকলেও বেশীরভাগ জায়গা পরিত্যক্ত থাকার সুযোগে এলাকাটিতে নিজেদের রাজনৈতিক অধিপত্য বিস্তার করতে দলীয় ক্যাডারদের বস্তিঘর তুলে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে ভাড়া দিয়ে অপরাধের পাশাপাশি মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে প্রতিমাসে আয়ের অর্ধ কোটি টাকার বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে এসব অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক দলের নেতাদের পকেটে।
আবার অপরাধের সাথে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিতে গেলে সামনা বাধা হয়ে দাড়ায় রাজনৈতিক নেতাদের উপরের মহলের ফোন কলের কারন।
নগরীর ৪১, টি ওয়ার্ডের মধ্য ১৩, পাহাড়তলী ওয়ার্ডটিতে খুন সহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয় অন্যান্য ওয়ার্ডের চাইতে বেশী।
১৯৯১ সালে বর্তমান রাজনৈতিক বিরোধী বিএনপির সরকারের আমলে জাতীয় সংসদে চট্টগ্রামে অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসাবে আলোচনায় আসার পর তৎকালীন বিএনপি সরকার ওয়ার্ডটির মাষ্টার লেইন এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ির স্থাপন করার পরেও অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে না আসায় বর্তমান খুলশী থানাটি এর আগে পুলিশ ফাঁড়ি হিসাবে ব্যবহার হলেও পরবর্তীতে থানা হিসাবে ঘোষনা দেয় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)।
ভাসমান ও নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করার কারনে অপরাধীরা সহজেই নিজেদের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালালেও প্রশাসনের কাছে কেউ অপরাধীদের নাম প্রকাশ করতে সাহস পায়না। ২০০৩ সালে ওয়ার্ডটির আমবাগান এলাকায় নিজ দলের অপরাধীদের হাতে খুন হয় রেলওয়ের শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তি যোদ্বা শফি। এর পর ওয়ার্ডটির আমবাগান এলাকায় তৎকালীন সিএমপি কমিশনার এলাকাটিতে একটি অস্থায়ী ১২ জন কনস্টেবল সহ ১৪ পুলিশের পুলিশ ফাঁড়ির ঘোষনা দিয়ে স্থাপন করার বছর খানেকের মাথায় পুলিশ ফাঁড়িটি প্রত্যাহার করার পর আবারও নিয়মিত অপরাধ সংঘটিত হয়ে আসছে আমবাগান এলাকাটিতে।
২০১৯ সালের (৪ সেপ্টেম্বর) খুলশী পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয় নিজেকে আওয়ামী লীগের ইউনিট নেতা হিসাবে পরিচয়দানকারী তৎকালীন মাদক ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন প্রকাশ ডাকাত বেলাল। বেলাল ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর পুলিশ সংবাদমাধ্যমকে সঠিক তথ্য না দেওয়ায় সবগুলো সংবাদমাধ্যম বেলালকে যুবলীগ নেতা হিসাবে সংবাদ প্রকাশ করলেও বাস্তবে বেলাল ছিলো অন্ত জেলা ডাকাত দলের সদস্য। অন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্যের পাশাপাশি বেলাল নিজেও একটি দল গঠন করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করতো।
একটি ডাকাতির ঘটনা করতে গিয়ে কক্সবাজার পুলিশের হাতে আটকের পর ঐ ঘটনায় দায়ের হওয়া ডাকাতি মলায় বেলাল ও তার সহযোগীদের ১৭ বছরের সাজা দেন চট্টগ্রাম জেলা দায়রাজজ আদালত। বেলাল সহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন থানায় ৪৭, টি মামলা রয়েছে।
বেলাল পুলিশের সাথে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার পর আমবাগান এলাকায় মাদক ব্যবসা কিছুদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু করে বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকা শফি হত্যা মামলার ফাঁসির আসামী শিপনের ভাগীনা মাদক ব্যাবসায়ী আলমগীর ও পুলিশের সাথে বন্দুক নিহত ডাকাত বেলালের সহযোগী ডাকাত আশরাফুল।
আলমগীর মাদক ব্যবসা চালু করার পর তার সাথে যোগদেয় দলীয় কোন পদ পদবী না থাকা আওয়ামীলীগ কর্মী দাবী করা ও কিশোর গ্যাংয়ের লিডার ডিকু সিকদার ও পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারী বিজয় চন্দ্র দে প্রকাশ (বঙ্গালি বাবু)। বর্তমানে আমবাগান এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে অন্তরালে থাকা রাজনৈতিক নেতাদের কর্মী পরিচয়দানকারী ডিকু সিকদার ও কিশোর গ্যাং লিডার ও কথিত পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারী বাঙ্গালী বাবু।
গত বছরের ৮,নভেম্বর ২০২১ তারিখ আমবাগান তরুন সংঘ এলাকায় বিকেল বেলা এসব মাদক ব্যাবসায়ী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য হানিফ (২৪) নামে এক কিশোর প্রতিপক্ষের হাতে নিহত হন এবং গুরুতর আহত হয় হানিফের ভাই অনিক সে বর্তমানে চিকিৎসাধীন। কিশোর গ্যাংয়ের এসব অপরাধের বিষয়ে চট্টগ্রাম র্যাব (৭) এর সরেজমিনে তদন্তে উঠে আসে। যা হানিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামীদের গ্রেফতারের পর র্যাব ৭ – এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে সাংবাদিকদের কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
অন্যদিকে এসব সন্ত্রাসীরা নিজেদের ক্ষমতা জানান দিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ডিউটিরত পুলিশ, সাংবাদিক সহ পুলিশের তথ্য সংগ্রহকারী গোয়েন্দা শাখা সিটিএসবির সদস্যের উপরও হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।
গত (২৭ জানুয়ারী) চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের পর থেকে পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারী কিশোর গ্যাংয়ের লিডার বাঙ্গালী বাবুর বিরুদ্ধে স্থানীয় খুলশী থানা বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় দায়ের হয়েছে ৮,টি মামলা।
এসব মাদক ব্যাবসায়ীদের ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী থেকে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, মাদক সহ বিভিন্ন অপরাধ জড়িতরা যতবড় অপরাধী হোক এদেরকে আমার পক্ষ থেকে কোন ছাড় দেওয়া হবেনা।
তিনি আরও বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমার ওয়ার্ডের প্রতিটি ইউনিটে গিয়ে সমাজের লোকজনের সাথে বৈঠক করে যে কোন অপরাধীর বিরুদ্ধে সোচ্চারের পাশাপাশি আমাকে ও স্থানীয় থানায় জানাতে।
অপরাধীরা আ,লীগ কর্মী সমর্থক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপরাধীরা কখনো কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী হতে পারেনা ও আর বর্তমানে আমি থানা ওয়ার্ড আ,লীগের কোন সাংগঠনিক দায়িত্বে নেই। এসব অপরাধীরা সাংগঠনিক দায়িত্বতে আছে কিনা এসব জানতে সাংগঠনিক কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্ত লোকদের থেকে জেনে নিতে পারেন। তবে আমি স্থানীয় খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলেছি এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে আইনগত ব্যবস্থা নিতে। এবং অপরাধীদের তালিকা ওসিকে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, এসব মাদক ব্যাবসায়ী ও কিশোর গ্যাংয়ের লিডারদের বিরুদ্ধে ভিকটিম পুলিশের সহযোগিতায় মামলা দায়ের করলে অথবা ভিকটিম নিজ উদ্যোগে মামলা দায়ের করার পর আসামীরা মামলার বাদীদের হুমকির মাধ্যমে আপোষ না হলে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় অথবা গভীর রাতে ভিকটিমের বাসার সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।
Leave a Reply