চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস ফের দখল! - মুক্ত আকাশ
    শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০৬:০২ অপরাহ্ন
    শিরোনাম:
    চট্টগ্রামে যুবদল-ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ২ জন গুলিবিদ্ধ, ওসি প্রত্যাহার চট্টগ্রামে বন্য হাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলতে পারে: মির্জা ফখরুল লেবার পার্টি ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক চলছে নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে এমন কোন শঙ্কা নেই আ,লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারি জামায়াতের আ,লীগকে রাজনীতিতে ফেরাতে একাধিক রাজনৈতিক দল তৎপর আ,লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা কোন অপরাধের সাথে জড়িত নয়,তাদের রাজনীতিতে বাধা নেই গাজায় ইসরায়েলি হামলার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হিথ্রো বিমানবন্দরের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

    চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস ফের দখল!

    • Update Time : মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৩
    • ৫২ Time View

    রেলওয়ে সেন্ট্রাল বিল্ডিংয়ের (সিআরবি) যেখানে হাসপাতাল নির্মাণ হওয়ার কথা, সেই এলাকাটি ফের দখলদারের কবজায় চলে গেছে। গেল ডিসেম্বরে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা থেকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ঘোষণা দিয়েছিলেন জনমত উপেক্ষা করে নগরীর ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না। এ ঘোষণার পর থেকেই উচ্ছেদ হওয়া সিআরবির গোয়ালপাড়া ফের চলে গেছে দখলদারের পেটে। এক মাস ধরে নির্বিচারে দখল চললেও এলাকাটি সংরক্ষণে রেল কর্তৃপক্ষের গরজ নেই।

    স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশ থেকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ঘোষণা দেন সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না। সমাবেশস্থলের পাশেই গোয়ালপাড়ার অবস্থান হওয়ায় সেই ঘোষণা সেখানে পরিষ্কার শোনা গেছে। সেদিন রাত থেকেই উচ্ছেদ হওয়া গোয়ালপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় দোকানপাট, ঘরবাড়ি তৈরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন দখলদাররা। এক মাস পর দেখা গেছে, বিভিন্ন গাছ ও পাহাড়ের টিলা কেটে দখলদাররা ‘যে যার জায়গা’ বুঝে নিয়েছেন। এ কাজে অর্থের বিনিময়ে রেলওয়ের স্টাফরা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

    অন্যদিকে ২০২১ সালে সিআরবিতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় একটি হাসপাতাল নির্মাণের খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনে নামে নগরীবাসী। আন্দোলনের মুখেই হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে মার্চে সেখানে টানা উচ্ছেদ চালায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। সেখানকার পেছনের অংশের প্রায় তিন একর জায়গা থেকে ১ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, দোকানপাট উচ্ছেদ হয়। এখন সেগুলো ফের বেদখলে চলে গেছে।

    সিআরবির রেলওয়ে হাসপাতালের সঙ্গে লাগোয়া এলাকা গোয়ালপাড়া। মাদক-অসামাজিক কার্যকলাপের জন্য এলাকাটির কুখ্যাতি রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা যায়, যেসব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোতে আবারও নির্মাণকাজ চলছে। গোয়ালপাড়ার বিভিন্ন গলিতে এনে রাখা হয়েছে ইট-বালি-সিমেন্ট। লোহার পাট দিয়ে ঘরের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। গোয়ালপাড়ার সম্মুখে ফের দেখা গেছে, শুধু দোকান আর দোকান। গত এক মাসের মধ্যেই এগুলো গড়ে তোলা হয়েছে।

    রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের তথ্যমতে, গোয়ালপাড়া কলোনি, তুলাতুলি বস্তি, হাসপাতাল কলোনিসহ সিআরবিজুড়ে অন্তত ২ হাজার অবৈধ স্থাপনা আছে। যার অনেকগুলোই গড়ে তোলা হয়েছে পাহাড়ের টিলা ও
    রেলওয়ের কর্মীরা থাকার জন্য ভালো জায়গা না পেলেও সংস্থাটির ভূ-সম্পদ বেহাত হওয়ার ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। সেগুলো উদ্ধারে তৎপরতা নেই। উল্টো হাসপাতাল নির্মাণের জন্য রেলওয়ে স্টাফদের নামে বরাদ্দ থাকা বাসাগুলো বুঝে নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এখন সেগুলোও বেহাত হয়েছে।

    সেসব বাসায় থাকতেন এমন এক রেলকর্মচারী বলেন, কলোনিতে ২২টির মতো বাসা ছিল। ৭টি বাসা ভাঙা পড়েছিল, নোটিশ পেয়ে আমরা বাসা ছেড়ে দিই। এখন সেগুলো ধর্মীয় কিছু স্থাপনা আর স্থানীয়রা দখল করে নিয়েছে।

    জানা গেছে, সিআরবির গোয়ালপাড়ায় ‘এগারো কোয়ার্টার’ বরাদ্দ ছিল রেলওয়ে স্টাফদের জন্য। তা ছাড়া সেখানে ভাণ্ডারি লেইন, নার্স কলোনি, হাসপাতাল কলোনি, আব্দুর রব কলোনিসহ বিভিন্ন বাসা রেলকর্মীদের জন্য বরাদ্দ হলেও যুগের পর যুগ সেগুলোতে বহিরাগতরা বসবাস করছে। তদারকি না থাকায় রাতারাতি গাছপালা, পাহাড়ের টিলা সাবাড় করে প্রতিদিন বাড়ছে অবৈধ বসবাস।

    গোয়ালপাড়ার মূল দখলের শুরু কিছুটা ভেতরের দিকে। চারদিক পাহাড়-গাছপালায় আচ্ছাদিত থাকায় দূর থেকে বোঝাও যায় না ভেতরে কী হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, গোয়ালপাড়ার মোড়ে মোড়ে পাহারা বসিয়েছে কিছু তরুণ। রেলওয়ে হাসপাতালের পেছন থেকে স্টেডিয়াম গেট পর্যন্ত সড়কের চারটি স্থানে দেখা গেছে মাদক সেবনে ব্যস্ত তরুণরা। ব্যাগ কাঁধে ছিলেন অনেক শিক্ষার্থীও। একপর্যায়ে বেদখল হওয়া ছবি তুলতে চাইলে ছুটে আসে একদল তরুণ। পরিচয় গোপন রেখে কথা হলে তারা বলেন, ‘ভালাই ভালাই এন্ডেতুন যোন গ্যুই। ইব্যা ঘুরিবের জায়গা নো। আঁর এন্ডে থাহি দ্যে।’ (স্বসম্মানে চলে যান। এটা ঘুরার জায়গা না, আমরা এখানে থাকি।)

    এরপর পর্যটক পরিচয়ে কথা হলো স্থানীয় এক দোকানদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনি এলাকার বড় ভাই থেকে দোকানটি নিয়েছেন ৩০ হাজার টাকায়। মাসিক ভাড়া ২ হাজার টাকা। নতুন করে ঘরবাড়ি গড়ে তোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটু আগে যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, তারাই ঘর তুলে বেচা-বিক্রি করে। যে খুঁটিগুলো গাড়া হয়েছে, সেগুলোই বিক্রি হয়। দুই খুঁটি মিলিয়ে একটি দোকান। যার অ্যাডভান্স ৩০ হাজার। রাজনৈতিক প্রভাবশালীর হাত থাকায় তেমন কোনো ভয় নেই ওই এলাকায়।’

    এর আগে ২০১৪ সালে একই এলাকায় তিনটি পৃথক ধর্ষণের জেরে সমালোচনার মুখে সিআরবির গোয়ালপাড়ায় উচ্ছেদ চালায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। ২০১৬ ও ২০১৯ সালে দফায় দফায় অভিযান চলে সেখানে। ২০২২ সালের মার্চে নতুন হাসপাতালের প্রকল্প এলাকায় উচ্ছেদের আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযানে গিয়ে হামলার শিকার হন রেলের প্রকৌশলী, আরএনবি সদস্যসহ সাতকর্মী।

    সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন এবং ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়ে সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর চট্টগ্রামের বাসিন্দারা নাগরিক সমাজের ব্যানারে আন্দোলন করেছেন। এ আন্দোলনের জেরে হাসপাতাল নির্মাণ থেকে পিছু হটে রেল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু হাসপাতাল না হলেও প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস থেমে নেই। সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত বলে মনে করছেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিআরবি রক্ষা আন্দোলনের নেতা খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বলেন, ‘কোনো অবৈধ দখল আমরা সমর্থন করি না। প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় আমরা আন্দোলন করেছি। আমি রেল কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাবো এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।’

    রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ওই এলাকায় নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান হয়। সিআরবির ব্রয়লার কলোনিতে কিছুদিন আগেই উচ্ছেদ হয়েছে। তবু দখলদাররা ফিরে আসে।

    রেলওয়ের স্টাফদের বিতাড়িত করা জায়গা বেদখলের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। কিন্তু মাদকের ব্যাপারে পুলিশ সাড়াশি ভূমিকা রাখতে পারে। এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়িও আছে।

    চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কাজ করছে। আমরাও ওই এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য পেলেই অভিযানে চলে। এলাকার বেশ কিছু মাদক কারবারিকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে, তারা আবার জামিনে বেরিয়ে আসে।

    সূত্র- কালবেলা।

    Please Share This Post in Your Social Media

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    More News Of This Category
    © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: CloudVai-ক্লাউড ভাই