মিথ্যাবাদী শাসকেকে কখনো ক্ষমা করবেন না মহান সৃষ্টিকর্তা - মুক্ত আকাশ
    শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০৬:১৮ অপরাহ্ন
    শিরোনাম:
    চট্টগ্রামে যুবদল-ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ২ জন গুলিবিদ্ধ, ওসি প্রত্যাহার চট্টগ্রামে বন্য হাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলতে পারে: মির্জা ফখরুল লেবার পার্টি ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক চলছে নির্বাচন পিছিয়ে যাবে, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে এমন কোন শঙ্কা নেই আ,লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারি জামায়াতের আ,লীগকে রাজনীতিতে ফেরাতে একাধিক রাজনৈতিক দল তৎপর আ,লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা কোন অপরাধের সাথে জড়িত নয়,তাদের রাজনীতিতে বাধা নেই গাজায় ইসরায়েলি হামলার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হিথ্রো বিমানবন্দরের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

    মিথ্যাবাদী শাসকেকে কখনো ক্ষমা করবেন না মহান সৃষ্টিকর্তা

    • Update Time : সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৩
    • ৪২ Time View

    হাসরের দিন বিচারকার্য  চলার সময় মিথ্যাবাদী শাসকের কথা বলবেন না মহান সৃষ্টিকর্তা। মুসলিম শরীফে বর্নিত হাসরের ময়দানে মহান সৃষ্টিকর্তা  তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন না এবং তাদেরকে গুনাহ থেকে ক্ষমা ও করবেন না। এই তিন ব্যাক্তি হচ্ছে,  মিথ্যাবাদী শাসক, ব্যাতিচারী বৃদ্ধ, ও গরীব অহংকারী ব্যাক্তি।

    মিথ্যা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : ‘মিথ্যাবাদীদের উপর অভিসম্পাত।’ (আল-ইমরান-৬১) তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা মিথ্যুক অপচয়ীকে সুপথ দেখান না।’ (মুমিন : ২৮)।

    সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘সত্যবাদীতা মানুষকে সততার পথে টেনে নিয়ে যায়, আর সততা টেনে নেয় জান্নাতের দিকে। কোন ব্যক্তি ক্রমাগত সত্য বলতে থাকলে এবং সত্যের পথ অন্বেষণ করতে থাকলে এক সময় তাকে সিদ্দিক তথা ‘পরম সত্যনিষ্ঠ’ বলে সে আল্লাহর কাছে লিপিবদ্ধ হয়। আর মিথ্যা মানুষকে পাপাচারের দিকে এবং পাপাচার জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়। আর কোন ব্যক্তি ক্রমাগত মিথ্যা বলা ও মিথ্যার পথ অন্বেষণ করতে থাকলে এক সময় আল্লাহর দরবারে সে ‘মিথ্যুক’ হিসাবে লিখিত হয়। সহীহ আল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস মুনাফিকের নিদর্শন, সে যতই নামায-রোযা করুক এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করুক, তাহলো কথা বললে সে মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে তা খেলাফ করে এবং আমানত রাখলে তার খেয়ানত করে। বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘চারটি দোষ যার ভেতরে থাকবে সে পাক্কা মুনাফিক। আর যার ভেতরে এর একটি থাকবে, সে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার ভেতরে মুনাফেকির একটি আলামত থেকে যাবে। আমানতের খেয়ানত করা, ওয়াদা খেলাফ করা, মিথ্যা বলা ও ঝগড়ার সময় গালিগালাজ করা।’ সহীহ বুখারীতে যে দীর্ঘ হাদীসে রাসূল (সা.)-এর স্বপ্নের বৃত্তান্ত দেয়া হয়েছে, তার এক জায়গায় রাসূল বলেন, ‘এক শায়িত ব্যক্তির কাছে আমরা উপস্থিত হলাম। দেখলাম, এক ব্যক্তি তার পাশে দাঁড়িয়ে লোহার একটি অস্ত্র দিয়ে একবার তার ডানপাশের চোয়াল ও চোখ একেবারে পেছন পর্যন্ত ফেড়ে দিচ্ছে। তারপর যখনই বাম দিকে অনুরূপ ফেড়ে দিচ্ছে, তখন ডান দিকটা আগের মত স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। আবার ডান দিকে পুনরায় চোয়াল ফেড়ে দিলে বাম দিক ভালো হয়ে যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম : এই ব্যক্তি কে? আমার সঙ্গী ফিরিশতাদ্বয় বললেন, সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা গুজব রটিয়ে ছেড়ে দিতো এবং তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত। আর একটি হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করো না। কেননা খারাপ ধারণা জঘন্যতম মিথ্যাচার। (বুখারী ও মুসলিম)

    মুসলিম শরীফে বর্নিত রাসূল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন না এবং তাদেরকে গুনাহ থেকে ক্ষমা ও করবেন না, তারা হলো ব্যভিচারী বৃদ্ধ, মিথ্যুক শাসক এবং অহংকারী দরিদ্র।’ মুসনাদে আহমদের হাদীসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘মানুষকে হাসানোর জন্য যে মিথ্যা বলে তার সর্বনাশ হোক, তার সর্বনাশ হোক, তার সর্বনাশ হোক।’ মিথ্যার মধ্যে অধিকতর মারাত্মক হচ্ছে মিথ্যা শপথ। আল্লাহ তায়ালা এটিকে মুনাফিকদের স্বভাব বলে অভিহিত করেছেন : ‘মুনাফিকরা জেনে শুনে মিথ্যা শপথ করে। তিরমিযি শরীফে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) বলেন, তিনজনের সাথে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন কথাও বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না, অধিকন্তু তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারণ থাকবে, তারা হলো যে ব্যক্তির উদ্বৃত্ত পানি আছে, কিন্তু পথিককে তা ব্যবহার করতে দেয় না, যে ব্যক্তি খরিদ্দারকে মিথ্যা শপথ করে বলে যে, আমি এত দামে কিনেছি, আর খরিদ্দার তা বিশ্বাস করে তা অধিক মূল্যে কিনে নেয়, অথচ আসলে সে সেই দামে তা কেনেনি এবং যে ব্যক্তি কোন নেতার প্রতি নিছক দুনিয়াবী স্বার্থের জন্য আনুগত্য করার ওয়াদা করে, অতঃপর নেতা তাকে স্বার্থ দিলে সে তার আনুগত্য করে, নচেৎ করে না। রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তোমাকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করে, তার সাথে মিথ্যা কথা বলা নিকৃষ্টতম বিশ্বাসঘাতকতা।’ রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর সাথে সবচেয়ে বড় জালিয়াতি হলো কোন ব্যক্তি যা দেখেনি, তাই দেখেছে বলে দাবি করা।’ অর্থাৎ সে বলে আমি এরূপ স্বপ্নে দেখেছি অথচ তা সে দেখেনি। হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, কোন বান্দা ক্রমাগত মিথ্যা বলতে থাকলে তার হৃদয়ে প্রথমে একটা কালো দাগ পড়ে, অতঃপর সে দাগ বড় হতে হতে পুরো হৃদয়টা কালো হয়ে যায়। তখন আল্লাহর কাছে তাকে মিথ্যাবাদী লেখা হয়।

    সুতরাং সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট কল্যাণ নিহিত আছে এমন অবস্থা ছাড়া কোন মুসলমানের কোন অবস্থাতেই মিথ্যা বলা উচিত নয়। তার উচিত হয় সত্য বলা, নচেৎ চুপ থাকা। রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে সে যেন ভালো কথা বলে নচেৎ চুপ থাকে।’ এ হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, কোন কথার কল্যাণকারিতা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত না হলে সে কথা বলা উচিত নয়। বুখারী শরীফের হাদীসে হযরত আবু মুসা (রা.) রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করেন,  মুসলমানদের মধ্যে কে উত্তম? উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সম্পূর্ণ জেনে শুনে হারাম বাক্য উচ্চারণ করে, সে জাহান্নামের এত নিচে নিক্ষিপ্ত হবে, যা পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত অপেক্ষাও দূরে অবস্থিত।

    উল্লেখ্য যে, কারও প্রাণ রক্ষা, দু’পক্ষের কলহ প্রশমিত করা এবং দাম্পত্য সম্পর্কে ভাঙন রোধ করার প্রয়োজনে মিথ্যা বলার শুধু অনুমতি আছে তা নয়, বরং ক্ষেত্র বিশেষে তা অবশ্য কর্তব্য। তবে এরূপ ক্ষেত্রেও সুস্পষ্ট মিথ্যা বলার চাইতে দ্ব্যর্থবোধক কথা বলা ভাল। যেমন সাওর পর্বতগুহায় যাওয়ার সময় এক ব্যক্তি হযরত রাসূল (সা.) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো, তিনি কে? আবু বকর বললেন, উনি আমার পথ প্রদর্শক।

    জনৈক মনীষী বলেন, মানুষের ভেতরে প্রায় আট হাজার চারিত্রিক দোষ রয়েছে। কিন্তু একটি গুণ তার সব দোষ ঢেকে দিতে সক্ষম। সে গুণটি হলো বাকসংযম। আর একটি গুণ তার সব দোষ দূর করতে পারে। তাহচ্ছে সত্যবাদীতা। আল্লাহ আমাদের সত্য গ্রহণে ও মিথ্যা বর্জনের তাওফিক দিন।

    Please Share This Post in Your Social Media

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    More News Of This Category
    © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
    ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: CloudVai-ক্লাউড ভাই