ডেস্ক রিপোর্ট: মার্কিন মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্টটি এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিনত হয়েছে। রাজনীতির আলোচনার নয়া খোরাক। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, কারাগারে নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক, রাজনৈতিক বন্দি, কোনো ব্যক্তির অপরাধের জন্য পরিবারের সদস্যদের শাস্তির মুখে পড়ার কথা বলা হয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, সাংবাদিকদের অযৌক্তিকভাবে গ্রেপ্তার, মতপ্রকাশ সীমিত করার জন্য ফৌজদারি মানহানি আইন কার্যকর, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং মিডিয়ার ওপর বিধিনিষেধের বিষয়ও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলোও স্থান পেয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্টে। রিপোর্ট প্রকাশের পর রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া এসেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা রিপোর্টকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, মার্কিন প্রতিবেদন একপেশে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উল্টো প্রশ্ন তুলছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
প্রশ্ন তুললেও মার্কিন রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেননি আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে বিরোধী দলগুলো বলছে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিবেদনই প্রমাণ করে দেশে মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। নির্বাচন নিয়ে যে আপত্তি তারা জানিয়ে আসছেন মার্কিন রিপোর্টে তা আবারো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রিপোর্টে যেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তা দেশের এবং দেশের মানুষের জন্য লজ্জার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে মার্কিন এই রিপোর্ট রাজনীতির মাঠে নয়া খোরাক যোগাবে।
মার্কিন প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট বললেন তথ্যমন্ত্রী: পক্ষপাতদুষ্ট সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব নিউজ পেপার প্রেস ওয়ার্কার্স ও বাংলাদেশ সংবাদপত্র কর্মচারী ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে উল্লিখিত বাংলাদেশ বিষয় নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, একটি সূত্র থেকে নয়, সরকারবিরোধী এবং পক্ষপাতদুষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে তারা তথ্যগুলো সংগ্রহ করেছে। সুতরাং সেই প্রতিবেদনটা একপেশে। অবশ্যই পুরো প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি না কারণ সেখানে অনেক ভালো কথাও বলা আছে। সার্বিকভাবে আমাদের মানবাধিকার, নির্বাচন, গণতন্ত্র সংক্রান্ত যে সমস্ত বিষয়াদি আছে সেগুলো পক্ষপাতদুষ্ট। হাছান মাহমুদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়েও তো অনেক প্রশ্ন আছে। ডনাল্ড ট্রাম্প তো এখনো নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেননি। সেটির প্রেক্ষিতে ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যেভাবে ক্যাপিটল হিলে হামলা হয়েছে, সে ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা তো আমাদের দেশে কখনো ঘটে নাই। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে তাদের নিজেদের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে যে প্রশ্নগুলো আছে বা তাদের নির্বাচন হওয়ার পর ক্যাপিটল হিলে যে হামলা, সেই বিষয়গুলোর দিকে তাদের তাকানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
ভবিষ্যতে অন্য কোনো বড় দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার কিংবা নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন দেয় কিনা, সেটিও দেখার বিষয়।
অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টটি দেশের জন্য লজ্জা। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বার বার সতর্ক বার্তা দেওয়ার পরেও সরকার এসব বিষয়ে কর্নপাত না করায় রাষ্ট্রের অর্থনীতি উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে যা ভোগ করতে হবে দেশের সাধারণ মানুষকে।
Leave a Reply