ডেস্ক রিপোর্ট: গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর বাজার এলাকায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বগুড়া থেকে ‘মোহাম্মদ’ নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে রাজশাহী যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। এসময় সিটে বসাকে কেন্দ্র করে গাড়ির চালক শরিফুল ও সুপারভাইজার রিপনের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেট এসে আবারও সুপারভাইজারের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা শুরু হলে স্থানীয় এক দোকানদার এসে ওই শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হন। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে স্থানীয় দোকানদারদের ওপর পাল্টা চড়াও হন। পরে স্থানীয়রাও একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাধে।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। দুই পক্ষ পরস্পরকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে স্থানীয়রা লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলে বিনোদপুর বাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সংঘর্ষে আহত দুই শতাধিক
দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হামলা ও পুলিশের রাবার বুলেটে আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে জায়গা দিতে না পেরে তাদের বাসে করে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। রামেকে মোট ৮৪ শিক্ষার্থী গুরুতর অবস্থায় ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে পুলিশের রাবার বুলেটে আহত ২০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়া বাকি শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অন্তত দুই শ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে কাভার করতে না পেরে তাদের বাস দিয়ে রামেকে পাঠিয়েছি।
পুলিশ বক্স ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ
সংঘর্ষের ঘটনায় বিনোদপুর ফটকসংলগ্ন পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালায় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। এছাড়া বিনোদপুর বাজারে স্থানীয় দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। তারা অন্তত ২৫-৩০টি দোকানে অগ্নিসংযোগ করেছেন।
ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত
এদিকে সংঘর্ষের জেরে দুদিন সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আজ রবিবার ও সোমবার সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। ঘটনার প্রায় ৪ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। তিনি মাইকে ক্লাস পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেন। এসময় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস বন্ধের প্রতিবাদ জানান।
সংঘর্ষে নিয়ন্ত্রণে আনতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে কাজ না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। পরে ঘটনাস্থলে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থায় নেয়ায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
Leave a Reply