শরীাফ হায়দার শিবলু: সারা দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কোটাবিরোধী আন্দোলন ক্রমেই বেশ বড় আকার ধারণ করছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন নিয়ে সরাসরি না বল্লেও সরকার যে হার্ডলাইনে চলে গেছে তা গতকাল পুলিশের মারমুখী আচরণ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের টকশো গুলোতে সরকারের দলীয় মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে।
অন্যদিকে আ,লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে সরকার বিরোধী আন্দোলনের রুপ নিচ্ছে। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনের খায়েশ পূর্ণ হতে দেব না।
আজ (১২ জুলাই) শুক্রবার বিকেল ৪টায় সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে গতকাল রাত নয়টায় আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় ছাড়েন।
এদিকে গতকাল (১১ জুলাই) বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আন্দোলনকারীরা লিমিট ক্রস করে যাচ্ছে। তিনি সরাসরি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আন্দোলনের নামে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ প্রশাসন বসে থাকবে না।
গত কয়েক দিন ধরে কোটা সংস্কার তথা কোটাবিরোধী আন্দোলনের টানা কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা অচল হয়ে পড়ে। গত বুধবার শিক্ষার্থীদের (বাংলা- ব্লকেড) কর্মসূচির কারণে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি অবস্থান দেখা গেছে। এদিকে গতকাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে নিয়ে হামলা চালালে আরিফ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলার বিষয়ে অস্বীকার করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী শিশির আহমেদ সুমনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুক্ত আকাশ ২৪.কমকে বলেন, ঘটনাটি সম্পুর্ন মিথ্যা এবং তখন আমি ঘটনাস্থলেই ছিলাম না। তবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালানোর সময় স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা হামলার দৃশ্য ধারণ করতে গেলে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সাংবাদিক আবু ওবায়েদা হামলার দৃশ্য ধারণ করায় তাকে মারধর করে এবং মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করে দেয় উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় রসায়ন বিভাগের আহত শিক্ষার্থী আরিফ হোসেন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শাহবাগে সতর্ক অবস্থানে থাকা পুলিশ চেয়েছে শিক্ষার্থীরা যেন শাহবাগ ছাড়া অন্য কোনো মোড় দখল নিতে না পারে। তাই তারা ব্যারিকেডও বসিয়ে রাখে। তবে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একসময় ধাক্কাধাক্কি হয়। জানা যায়, পুলিশের সাঁজোয়া যানে উঠে কয়েকজন শিক্ষার্থী ভুয়া ভুয়া স্লোগানও দেন। পরে শিক্ষার্থীরা সমস্বরে ‘গো ব্যাক গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর থেকে আস্তে আস্তে পিছু হটে পুলিশের সাঁজোয়া যান।
এরপর শাহবাগ মোড়ের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে তাদের কর্মসূচি শেষ করেন। কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, আমাদের এক দাবিসহ গতকাল সারা দেশে আন্দোলনে যে হামলা এবং বাধা দেওয়া হয়েছে আর যারা এটি করেছে তাদের বিচারের দাবিতে দেশের সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে আইন পাস করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।
রাজধানীর বাহিরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ কৃষি, কুমিল্লা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রতিহত করতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও গতকাল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ হাসান। তিনি আরও বলেন, দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেছেন, কোটা নিয়ে বুধবার (১০ জুলাই) আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই আর কোটা নিয়ে আন্দোলনের কোনো অবকাশ নেই। আমরা অনুরোধ করব, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নতুন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মতো কর্মসূচি দেবেন না; অন্তত এই চার সপ্তাহ। এরপরও যদি আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।
তবে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন নিয়ে সরকার যে হার্ডলাইনে রয়েছে তা গতকাল পুলিশের মারমুখী আচরণেই বুঝা গেছে। পুলিশের পাশাপাশি চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পেতে পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।
Leave a Reply