রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি রাজপথে তাদের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে। অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করছে।
এবার যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে শরিক হয়েছে ৩৮টি দল ও ১৫টি সংগঠন। এরই মধ্যে গত বুধবার যুগপতের দ্বিতীয় ধাপের গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তার আগে গত ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল করেছে বিএনপি ও মিত্র দল এবং জোটগুলো। তবে দ্বিতীয় ধাপের গণঅবস্থান কর্মসূচিতে ছোট ছোট দল ও জোটের লোকসংখ্যা কম হওয়ায় সরকারি দলের সমালোচনায় অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি। এ নিয়ে দলের হাইকমান্ড কিছুটা বিব্রত ও ক্ষুব্ধ। সেইসঙ্গে যুগপতের প্রথম কর্মসূচির পর যোগাযোগ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামী। এ অবস্থায় চলমান যুগপৎ আন্দোলন-কর্মসূচির সফলতার ফসল ঘরে তোলাটা বিএনপি ও মিত্রদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে ভোলায় নূরে আলম ও আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সীগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন ও যশোরে আব্দুল আলিমসহ মোট ৫ জন হত্যার প্রতিবাদে, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। যদিও গত বছরের ২২ আগস্ট থেকেই জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে দলটি। সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম, ১৫ অক্টোবর, ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর ও সব শেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। যদিও ঢাকার সমাবেশের স্থান নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেদিন ১ জন নিহত হন। সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে। পরে গত সোমবার তারা মুক্ত হন।
উল্লেখ্য, রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এরপর গত ১৯ ডিসেম্বর ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ হিসেবে ২৭ দফা ঘোষণা দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মূলত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ঘোষিত ১৯ দফা ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘ভিশন ২০৩০’-এর আলোকেই উক্ত ২৭ দফা ঘোষণা করা হয়েছে।
Leave a Reply