শরীফ হায়দার শিবলু: প্রতিনিয়ত দুঃখ কষ্টের মাঝে সততার সহিত জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার লোক গুলোই হচ্ছে মধ্যবিত্ত। যারা নিজের ভেতর হাজারো সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার পরেও কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন হাসিমুখে এই বাক্যটি বের হয়ে শুধু মাত্র সততা ও মহান সৃষ্টিকর্তার উপর অগাধ বিশ্বাসের কারনে।
আমরা যাঁরা লেখাপড়া জানা মানুষ, তাঁরা মধ্যবিত্ত কথাটি প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি, সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা অসুবিধায় পড়া আলোচনায় থাকা শব্দটিই হচ্ছে মধ্যবিত্তকে নিয়ে।
এমনিতে বিত্তের দিক থেকে যাঁরা মাঝে থাকেন, তাঁরাই মধ্যবিত্ত। যদিও মধ্যবিত্তের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা কঠিন। সাধারণভাবে দৈনিক আয়সীমার ভিত্তিতে বিশ্বের জনগোষ্ঠীকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করার রীতি আছে।
আন্তর্জাতিক পিউ রিসার্চ সেন্টার মধ্যবিত্ত ও অন্যান্য ক্যাটাগরির জন্য একটি মান নির্ধারণ করেছে। যেমন চার সদস্যের একটি পরিবারের দৈনিক আয় যদি ১০ ডলার ১ সেন্ট থেকে ২০ ডলারের মধ্যে হয়, তবে তারা মধ্যবিত্ত। এ হিসাবে এই শ্রেণির মানুষের বার্ষিক আয় ১৪ হাজার ৬০০ থেকে ২৯ হাজার ২০০ ডলার।
আর বাকি শ্রেণিগুলোর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে- দৈনিক ২ ডলার বা এর কম আয় হলে দরিদ্র, ২ ডলার ১ সেন্ট থেকে ১০ ডলারের মধ্যে আয় হলে নি¤œ আয়ের, ২০ ডলার ১ সেন্ট থেকে ৫০ ডলার হলে উচ্চমধ্যবিত্ত এবং ৫০ ডলারের ওপর হলে তাকে উচ্চবিত্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যদিও এই হিসাবটি অনেক পুরোনো।
তবে বাংলাদেশ তো এসব হিসাবে মধ্যে পড়েনা! কারন বাংলাদেশের মানুষ দৈনিক ৮ থেক ১০ ঘন্টা কাজ যে মজুরি পায় তা তা আন্তর্জাতিক এই হিসাবের মধ্যে পড়েই না, কারন
পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী দৈনিক ১০ ডলার ইনকাম করলে নিম্নবিত্তের হিসাব ধরা হয়, সেখানে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন দৈনিক ১ থেকে দেড় হাজার টাকা কামানো সুযোগ নেই। তার মধ্যে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের লাগামহীন দামের কারনে বর্তমান সময়ে মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো দৈনন্দিন মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের খরচ পূরণ করতে দিশেহারা।
একমাত্র মধ্যবিত্ত লোকজন নিজের সততা টুকু ও সৃষ্টিকর্তার উপর অগাধ বিশ্বাসকে অবলম্বন করে হাজার কষ্টের সাথে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরেও সবার সামনে মাথা উঁচু করে বলে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
এখন পাঠকদের কাছে তুলে ধরি মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি ছেলের সততার গল্প।
ছেলেটির নাম মোহাম্মদ ইসহাক, বয়স আনুমানিক ২৩/ ২৪ বছর হবে। পরিবার নিয়ে থাকে নগরীর আমবাগান এলাকার একটি ভাড়া বাসাতে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন।
ইসহাক ফোর এইচ গ্রুপের ইলেক্ট্রনিক সেকশনে কাজ করে, প্রতিদিনের মতো গত (৬ জানুয়ারি) সোমবার অফিস ছুঠি হওয়ার পর লোকাল বাসে করে নিজের গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে নগরীর কালুরঘাট সিএমবি এলাকা থেকে লোকাল বাসে উঠে।
ইসহাক যে বাসের যাত্রী সে বাসের আবীদ নামের এক যাত্রী নিজের মোবাইল ফোনটি পেলে বাস থেকে নেমে যায়, কিছুক্ষণ পর একই বাসের যাত্রী ইসহাক মোবাইলটি দেখতে পেয়ে নিজ হেফাজতে নেয়।
ইসহাক কাউকে কিছু না বলে নিজের গন্তব্যস্থান নগরীর আমবাগান এলাকায় পৌঁছে অপেক্ষা করতে থাকে কখন মোবাইলের প্রকৃত মালিক ফোন দিবে! মোবাইলটি হচ্ছে শাওমি কোম্পানির রেডমি সি-১২ মডেলের। যার বর্তমান বাজার মুল্য ১২ হাজার টাকা।
কিছুক্ষন পর মোবাইলে একটা কল আসে, ইসহাক কলটি রিসিভ করার পর অপরপ্রান্ত থেকে জানায়, মোবাইলটি তার, এবং চলন্ত বাসের মধ্যে হয়তো তার মোবাইলটি হারিয়ে গেছে।
ইসহাক তার কথা শুনে তাকে নগরীর আমবাগান এলাকায় এসে মোবাইলটি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। এরপর ইসহাক মোবাইলের মালিক আবীদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
এমন সময় এই প্রতিবেদক ইসহাকের পূর্ব পরিচিত হওয়ায়, ইসহাক কেমন আছে জানতে চাইলে সে বলে আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া ভালো আছি।
এরপর কথার ফাঁকে ইসহাক বলে ভাইয়া এই মোবাইলটা গাড়িতে পেয়েছি, যার মোবাইল সে ফোন দিয়েছে, বলছি এসে নিয়ে যাইতে।
কিছুক্ষণ পর মোবাইলের মালিক আবীদ এসে উপস্থিত সবার সাথে কুশল বনিময় করে মোবাইল নিয়ে চলে যায়।
অথচ বর্তমান সময়ে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহৃত জিনিসের মধ্যে মোবাইল আমাদের প্রতিটি কাজের একটি মাধ্যম হিসাবে পরিচিত। আর নিজের শখের মোবাইলটি হারিয় গেলে থানা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ বা সাধারণ ডায়েরি করেও কোন ফল পাওয়া যায়না।
যা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের সততার ও মহান সৃষ্টিকর্তার উপর অগাধ বিশ্বাসের কারনে আবীদ হয়তো তার মোবাইলটি হারিয়ে যাওয়ার পরেও পেয়েছে।
যাদের পেটে খাবার না থাকলে সমাজে মাথা উঁচু করে হাসি মুখে বলে সমাজের লোকজনের কাছে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পেতে পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।
Leave a Reply