সম্পাদকীয়: এ যেন জীবন সংগ্রামের একটি ভুখা মিছিল! এটা কোন দুর্ভিক্ষ কবলিত দেশ নয়, এই দৃশ্য প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সরকার অনুমোদিত কম দামে সামান্য সাংসারিক খরচের লাগাম টানতে টিসিবির নায্য মূল্যের গাড়ির পিছনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে অথবা গাড়ীর পিছনে দল বেঁধে ছুটে চলছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন!
অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দামের কারণে সারাদেশে যেন দেখা দিয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের ভুখা মিছিল! আর্থিক আয় না বাড়লেও সাংসারিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে খাবার খাওয়ার পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছেন! এরপরও টানতে পারছেন না খরচের লাগাম। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, অনেকের পক্ষে সংসারের খরচ চালানোই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের আর্থিক সংকট অন্যান্য সময় খারাপ গেলেও তা প্রকাশ করতে না পারার দৃশ্যটি রাষ্ট্রের হাজারো সংকটের সময় প্রকাশ না পেলও বর্তমান সময়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নধ্যবিত্ত লোকজনের দুর্বিষহ জীবনের চিত্রটি ইতি মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায় এসব নিভৃতে থাকা মধ্যবিত্ত পরিবারের দুর্বিষহ জীবন সংগ্রামের দৃশ্য!
সরকারি হিসাবেই গত এক সপ্তাহে প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। খোলা আটার দাম ১ দশমিক ৪৫ এবং প্যাকেটজাত আটার দাম ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। প্যাকেট ময়দার দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ। পাম তেলের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে ডিম, চিনি, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, জিরার দামও বেড়েছে বলে টিসিবির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরে সরু চালের দাম ৪ দশমিক ৯২ এবং মোটা চালের দাম ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়েছে। প্যাকেট আটার দাম বেড়েছে ২৭ দশমিক ৯৪ এবং খোলা আটার দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ। ৩৫ দশমিক ২১ শতাংশ বেড়েছে খোলা ময়দার দাম।
এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলও। এক বছরে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ, পাম তেলের দাম বেড়েছে ৩৯ দশমিক ১৫, বড় দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৪৪ দশমিক ৪৪, অ্যাংকর ডালের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ২৯ ও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
টিসিবির প্রতিবেদনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে দাম দেখানো হয়েছে, বাস্তবে বাজারে সবগুলো পণ্য তারচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবির প্রতিবেদনে মোটা চালের দাম ৪৫-৫০ টাকা দেখানো হলেও কার্যত বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৪ টাকায়। খোলা আটার দাম টিসিবির হিসাবে কেজি ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা দেখানো হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়। সয়াবিন তেলের দাম টিসিবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ১৫৫ থেকে ১৬৫ টাকা, অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা।
একইভাবে ১৫৫-১৫৮ টাকা বিক্রি হওয়া পাম তেলের দাম টিসিবির হিসাবে দেখানো হয়েছে ১৪৫-১৫০ টাকা। বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হলেও টিসিবির প্রতিবেদনে দাম দেখানো হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। ডিমের হালি টিসিবি ৩৬-৩৮ টাকা বললেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়।
টিসিবির প্রতিবেদনের সঙ্গে বাজারে ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দামেও ভিন্নতা পাওয়া গেছে। বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০-১৭৫ টাকা বিক্রি হলেও টিসিবি বলছে ১৫০-১৬৫ টাকা। একইভাবে গরুর মাংসের কেজি ৬২০-৬৫০ টাকা হলেও টিসিবি বলছে ৬০০-৬২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারমূল্যের চেয়ে কম দেখানো হলেও এক বছরে সব ধরনের পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার তথ্য উঠে এসেছে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছর আগে কেজি ৫৮-৬৪ টাকায় বিক্রি হওয়া সরু চালের দাম এখন ৬০-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ৪৪-৪৮ টাকা।
এক বছর আগে কেজি ৩৩-৩৫ টাকায় বিক্রি হওয়া প্যাকেট আটা ৪২-৪৫ টাকা এবং ৩০-৩২ টাকায় কেজি বিক্রি হওয়া খোলা আটার দাম ৩৪-৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা ময়দা এক বছর আগে যেখানে ৩৫-৩৬ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে ৪৬-৫০ টাকায়। প্যাকেট আটার দামও বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০ টাকায়, যা এক বছর আগে বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকায়।
এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলও। এক বছর আগে ১১৬-১২০ টাকা লিটার বিক্রি হওয়া খোলা সয়াবিন তেলের দাম এখন ১৫৫-১৬৫ টাকা। প্রতি লিটার পাম তেলের দাম বেড়ে হয়েছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ১০৫-১০৭ টাকা।
বড় দানার মশুর ডাল ৯৫-১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা এক বছর আগে ছিল ৬৫-৭০ টাকা। এক বছর আগে ৪০-৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া অ্যাংকর ডালের দাম এখন ৪৮-৫০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজের দাম এখন ৪০-৫০ টাকা, যা এক বছর আগে ছিল ২৫-৩৫ টাকা।
লেখক- শরীফ হায়দার শিবলু।
সম্পাদক মুক্ত আকাশ ২৪.কম।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি পেতে ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।
Leave a Reply