ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের প্রত্যেক যুবক-যুবতির হাতকে দেশ গড়ার কারিগরের হাত হিসেবে গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে মদিনার সনদে দেশ পরিচালনা করবে, আমরা এমন একটা জাতি গড়বো; তখন ইনশা আল্লাহ এই দেশের মানুষ আর বিশ্বে চাকরীর জন্য যাবে না। যেভাবে ১৭৫৭ সালের আগে বিশ্বের মানুষ এদেশে আসতো চাকরীর জন্য। এই দেশ আবার তার পুরনো গৌরব ফিরে পাবে। আমরা স্ইে গৌরবটা ফিরিয়ে আনতে চাই।
আজ (৪ জানুয়ারি) শনিবার কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মদিনার সনদে দেশ পরিচালনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর সংবিধান সবাইকে সম অধিকার দিয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্রের প্রথম সংবিধান হচ্ছে মদিনার সনদ। মদিনার সনদের এক থেকে পাচ নম্বর ধারা পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধারায় মানুষের অধিকার সংরক্ষণের সনদ। সেখানে প্রত্যেকটি ধারায় বলা হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে কোন নাগরিকের অধিকার বিভক্ত করা যাবেনা। ইসলাম ধর্ম কারোর ওপর জুলুম করে চালানো যাবেনা পরিষ্কার ভাবে মাদিনার সনদে বর্ণিত আছে। তাতে বলা আছে, সকল ধর্মের নাগরিক নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে দিতে হবে। বাইরে থেকে যদি আক্রমণ করা হয় মুসলমানদের দায়িত্ব হবে তাদের পক্ষ নিয়ে লড়াই করা। আমরা সেই বাংলাদেশ চাই।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসেন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
কর্মী সম্মেলন শুরুর আগেই সম্মেলন স্থল কানায় কানায় ভরে যায়। কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকালে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে ভোর থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আসতে থাকে নেতাকর্মীরা। কর্মীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে কুষ্টিয়ার অলিগলি। কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠ জামায়াত কর্মীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায় সম্মেলন শুরুর আগেই। নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় কুষ্টিয়া শহর। দীর্ঘ ১৮ বছর পর কর্মী সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। সম্মেলনস্থল ছাড়াও পাশ্ববর্তী চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে প্রজেক্টর স্থাপন করে বক্তাদের বক্তব্য প্রদর্শণের ব্যবস্থা করা হয়।
কুষ্টিয়া জেলা আমীর অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি সুজা উদ্দিন জোয়ারদার ও পৌর আমীর মো. এনামুল হকের সঞ্চালনায় সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চেলের টিম সদস্য অধ্যক্ষ খন্দকার এ কে এম আলী মুহসিন, ড. আলমগীর বিশ্বাস, মাওলানা আবদুল মতিন, ঝিনাইদহ জেলা আমীর আলী আজম মোহাম্মদ আবু বক্কর, পাবনা জেলা আমীর আবু তালেব মন্ডল, মেহেরপুর জেলা আমীর, তাজউদ্দিন খান, মাগুরা জেলা আমীর এবিএম বাকের, চুয়াডাঙ্গা জেলা আমীর এডভোকেট রুহুল আমীন, রাজবাড়ী জেলা আমীর এডভোকেট নুরুল ইসলাম, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ইমরান হোসাইন ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী রবীন্দ্র নাথ।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়া জেলা নায়েবে আমীর আব্দুল গফুর, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মো. সোহরাব উদ্দিন, মো. খায়রুল ইসলাম রবিন, অধ্যাপক মাজহারুল হক মোমিন, কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসাইন, ছাত্রশিবিরের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মো. আবু মুসা, জেলা শহর সভাপতি হাফেজ সেলিম রেজা, মিরপুর উপজেলা আমীর মাওলানা খন্দকার রেজাউল করিম, দৌলতপুর উপজেলা আমীর মাওলানা বেলাল উদ্দিন, কুমারখালী উপজেলা আমীর আফতাব উদ্দিন, ভেড়ামারা উপজেলা আমীর মো. জালাল উদ্দিন, সদর উপজেলা আমীর মাওলানা শরিফুল ইসলাম, খোকসা উপজেলা আমীর মো. নজরুল ইসলাম, ইবি থানা আমীর মো. রফিকুল ইসলাম, পেশাজীবী থানা সভাপতি মাহবুবুর রহমার হামীম, শ্রমিক কল্যান সভাপতি এস এম মুহসিন প্রমূখ।
এর আগে মুফতি আমীর হামজার অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে কর্মী সম্মেলন শূরু হয়। সম্মেলনে কিছুক্ষণ পর পর ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেন জেলা সাংস্কৃতিক শিল্পীরা। সকাল ১১টার দিকে আমীরে জামায়াত মঞ্চে উঠেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর সবুজ, মাটির গর্ভে অফুরন্ত সম্পদ। পানিতে আল্লাহ তায়াল অফুরন্ত সম্পদ রেখেছেন, এদেশের বাতাস অতি অনুকুল। না গরম না ঠান্ডা। ছোট এই দেশে বিপুল জনসংখ্যা দান করেছেন। জনগন সত্যিকার অর্থে জনশক্তি। যখন জনসংখ্যাকে প্রশিক্ষণ না দেওয়া হয় তখন জনসংখ্যা আপদে পরিণত হয়। আমরা জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করবো। এদেশ সকল ধর্মবর্ণের মানুষের।
তিনি বলেন ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছিল। যারা অঙ্গিকার করেছিলেন জাতিকে অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার; তারা কেউ সে অধিকার ফিরিয়ে দেয়নি। কথা রাখেনি। তারা জাতির সঙ্গে বেইমানি করেছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যারা মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাকে নিজেদের বাপ-দাদার তালুক মনে করতেন। চেতনার কথা বলে তারা লুন্ঠন করেছেন। গণহত্যা চালিয়েছেন। তাদের সন্তানেরা আকাম কুকাম করে ধর্ষণের সেঞ্চুরি করেছেন। সাড়ে ১৫ বছরে তাদের লুন্ঠনের হিসেব বেরিয়েছে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা।
তিনি উল্লেখ করেন, রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্র থেকে একটি প্রকল্প থেকে ৫৭ হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। মেগা উন্নতির কথা বলে মেগা ডাকাতি করা হয়েছে। একটা পদ্মাব্রীজ তৈরি করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়েছে তা দিয়ে ৪টা পদ্মাব্রীজ করা যেত। তারা আবার বড় কথা বলে। তারা লুট করে বেগম পাড়ায় বাড়ি করেছে।
এরা প্রত্যেকটা প্রকল্পে চুরি করেছে। ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করেছে। ডাকাত এস আলমকে লেলিয়ে দিয়ে ইসলামী ব্যাংক ডাকাতি করেছে শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা বোনের মেয়ে লন্ডনের এমপি বানিয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি হয়েছিলেন মন্ত্রীও। এখন তিনি দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। সেখানে দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এটা বাংলাদেশ এবং জাতির জন্য লজ্জার। আমাদেরও লজ্জা হলে কি হবে। তাদের লজ্জা নাই। বাংলাদেশ ছিল তাদের ইনকাম সোর্সের জায়গা। আর কলিজা ছিল অন্য দেশে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপিদের সন্তান দেশে নেই। সবার ঠিকানা বেগম পাড়ায়। তারা দেশকে যদি ভালবাসতো তাহলে তারা দেশেই থাকতো।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাসেম বলেন, কুষ্টিয়ার জনগণ বৈষম্যহীন দেশ গঠনের সঙ্গে আছে। কোরআনের বাংলাদেশ দেখতে হলে কুষ্টিয়ার ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। একইসাথে শীত উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করায় কুষ্টিয়াবাসীকে ধন্যবাদ জানান।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পেতে পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।
Leave a Reply