আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে ইউরোপের দেশ মাল্টাতে নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করেছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী ও কন্যা। মোট দুইবার এ চেষ্টা চালান তারা। তবে অর্থ পাচার, দুর্নীতি এবং ঘুষের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন মাল্টার পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ। এমন তথ্য দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
ফাঁস হওয়া নথির উদ্ধৃিত দিয়ে বৃটেনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে বলা হয়, পতিত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন বৃটেনের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা টিউলিপ সিদ্দিকের চাচা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। তার স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে মোট দুইবার হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের কাছে মাল্টার নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন করেন তিনি। তবে দুর্নীতি এবং ঢাকায় জমি আত্মসাতের দায়ে অভিযোগ থাকায় দুইবারই তার আবেদন নাকচ করে দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
ফাঁস হওয়া নথির ভিত্তিতে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, শাহীনের বিরুদ্ধে হাসিনার আমলে ঢাকার জমি আত্মসাতের অভিযোগ থাকায় মাল্টার ইমিগ্রেশন কন্সালটেন্সি তাদের নাগরিকত্বের আবেদন নাকচ করে দেয়। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, শাহীনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে জমি আত্মসাতের অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। শাহীন সিদ্দিক হচ্ছেন টিউলিপের আপন চাচা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী। তারিক ছিলেন একজন সামরিক কর্মকর্তা। যিনি শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন। টানা ১৬ বছর স্বৈরশাসন চালানোর পর গত আগস্টে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। তার গোটা শাসনামলেই ব্যক্তিগত সামরিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন তারিক। হাসিনার পতনের পর অক্টোবরে তারিক সিদ্দিকের পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মাল্টাতে পাসপোর্ট আবেদনের নথিতে তারিকের পরিবার কীভাবে সেখানে নাগরিকত্ব নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তার বিশদ বিবরণ পাওয়া গেছে। হেনলির প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, ঢাকায় প্রচ্ছায়া নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে জমি আত্মসাৎ করেন শাহীন সিদ্দিক। ২০১৩ সালে নাগরিকত্ব আবেদনের নথিতে প্রচ্ছায়া নামের সংগঠনটির কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি। সমালোচকদের দাবি ২০০৯ সালের পর থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন তারিক। তিনি দেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রচ্ছায়ার মাধ্যমে ঢাকার জমি দখল করেছিলেন। ২০১৬ সালে আত্মসাৎকৃত ওই জমিগুলো বিক্রি করে দেন তিনি।
ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে দুইবার মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন শাহীন। দ্বিতীয়বার লন্ডনে থাকা মেয়ে বুশরার সঙ্গে যৌথভাবে আবেদন করেছিলেন তিনি। বুশরা টিউলিপের চাচাতো বোন। ২০১১ সালে প্রচ্ছায়ার পরিচালক হিসেবে ছিলেন বুশরা। ২০১৫ সালের মার্চে মাল্টাতে নাগরিকত্বের জন্য যৌথ আবেদন করেন তারা। যেটি পেতে তাদের যথাক্রমে ৬ লাখ ৫০ হাজার ও ২৫ হাজার পাউন্ড লাগতো। এর সঙ্গে ফি হিসেবে আরও ৭০ হাজার পাউন্ড নিতো হেনলি। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ কোটি টাকার সমান। আবেদনের অংশ হিসেবে শাহীন কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংকে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার দেখিয়েছিলেন। ১১ বারে এই অর্থ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল। তবে এসব অর্থের উৎস কী ছিল সেটি স্পষ্ট নয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান জানিয়েছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে আইন আছে সে অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি বিদেশে নিতে পারবেন না।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পেতে পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।
Leave a Reply