ইসলামী ডেস্ক: নতুন পৃথিবী উপহার দিতে মহানবী (সা:)-এর আগমন।তিনিই তো হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ তাঁর রাসুলকে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি অন্য সব ধর্মের ওপর একে জয়যুক্ত করতে পারেন; মুশরিকরা এটাকে যতই অপ্রিয় মনে করুক না কেন।
(সুরা তাওবা আয়াত- ৩৩)
আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, ইসলাম সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এসেছে। মিথ্যা ও অন্যায়ের ওপর জয়যুক্ত হতে ইসলামের অভ্যুদয় ঘটেছে। আসমানি ধর্মগুলোর সর্বশেষ ও সার্বিকভাবে পরিপূর্ণ রূপই হলো ইসলাম। তাই ইসলামের জীবনাদর্শ অন্য সব ধর্মদর্শন থেকে শ্রেষ্ঠ।
মহানবী (সা:) এর আগমনের আগে ও পরে এবং বর্তমান যুগ এবং আগামী দিনের অনাগত যুগ মুহাম্মদ (সা:) এর আবির্ভাব, তাঁর চিরন্তন দাওয়াত ও ত্যাগ-তিতিক্ষার কাছে ভীষণভাবে ঋণী। তিনি তলোয়ারের নিচ থেকে মানবতাকে উদ্ধার করেছেন। বদলে দিয়েছেন পৃথিবীর রং ও নিয়মকানুন। নিস্তেজ ঘুমন্ত হৃদয়গুলোকে জাগিয়ে তুলেছেন ইমানের উষ্ণতায়। তাঁর আগমনে চমকে উঠেছিল পুরো পৃথিবী।
সভ্যতা-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ন্যায়নিষ্ঠা, আধ্যাত্মিকতা, চরিত্র ও সমাজ- সব কিছুতেই এসেছিল পরিবর্তন। জাহেলিয়াতের সমাজে আগমন করে তিনি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ, মানবতাবাদী এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যখন মানুষ নিজ হাতে গড়া মূর্তির পূজা করত, তাদের ভয় করত, এমনকি পাহাড়-পর্বত, নদী-গাছও ছিল তাদের আরাধ্য। তখনই মহানবী (সা:) তাদের দান করলেন শক্তিসঞ্চারী এক আকিদা। তাওহিদের আকিদা। একত্ববাদের বিশ্বাস। মানুষ খুঁজে পেল আপন অস্তিত্বের সার্থকতা।
মুক্তি পেল দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে। প্রাচীন ধর্মগুলো মানবজীবনকে দুভাবে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। দ্বীন ও দুনিয়া। ইহকাল ও পরকাল। দ্বীন ও দুনিয়ার একত্রীকরণ ও সহাবস্থানকে অসম্ভব মনে করা হতো। দুনিয়াদাররা মনে করত, আসমান-জমিনের স্রষ্টার দিক থেকে মুখ না ফেরালে অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধন ও সমৃদ্ধি অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অন্য দল মনে করত, বৈরাগ্যবাদকে আঁকড়ে না ধরলে দ্বীনদার হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
দ্বীন ও দুনিয়ার এই দুস্তর ব্যবধানের ফলেই দরজা খুলে যায় ধর্মহীনতা ও খোদাদ্রোহিতার। এই নাজুক পরিস্থিতিতে এলেন মুহাম্মদ (সা:)। ঘোষণা করলেন, মানুষের সঠিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দ্বীনের কোনো বিরোধ নেই, থাকতে পারে না। তিনি শিখিয়েছেন এই দোয়া- হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দান করো এবং পরকালেও কল্যাণ দান করো। আর আমাদের বাঁচাও জাহান্নামের আজাব থেকে।
(সুরা বাকারা : ২০১)
সভ্য দুনিয়ার জন্য মুহাম্মদ (সা:) এর অন্যতম অবদান হলো শতধাবিচ্ছিন্ন মানবসমাজকে তিনি সাম্যের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। সে সময় এক গোত্রের সঙ্গে আরেক গোত্রের কোনো সম্পর্ক ছিল না। স্বাধীন ও গোলাম, আরব ও অনারব- এভাবেই অসমতার দুর্ভেদ্য প্রাচীর ছিল যুগ যুগ ধরে। তিনি মানুষকে শুনিয়ে দিলেন সেই বিপ্লবী ডাক। হে লোক সকল! তোমাদের প্রতিপালক এক। তোমাদের পিতৃপুরুষও এক।
তোমরা সবাই আদম সন্তান। আর আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি সেই, যে তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে। খোদাভীতি ছাড়া অনারবের ওপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই আরবের।
বিপ্লবী এই ঘোষণা হতবাক করে দিল মানুষকে। মানুষ পেল সাম্যের ধারণা। তাঁর আগমনের আগে মানুষ নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল। সে জানত না কোথায় যেতে হবে তাকে এবং কোথায় শেষ হবে এই যাওয়া? তিনি মানুষকে উপযুক্ত ও সম্মানজনক এক গন্তব্যের পথ দেখালেন। নির্ধারণ করে দিলেন প্রকৃত ঠিকানা। মানুষের মাঝে এই বিশ্বাস দৃঢ়মূল করলেন, তার মেধা, প্রতিভা, উচ্চাশা ও কাজকর্মের কেন্দ্রবিন্দু হলো আসমান-জমিনের সৃষ্টিকর্তাকে চেনা। এভাবেই মাত্র ২৩ বছরের কার্যকর কর্মকুশলতায় বদলে গেল পৃথিবী। মানবতার উত্তরণ ঘটল। জমে থাকা অন্ধকার দূর হয়ে আলোকিত হলো চারদিক।
লেখক-মাওলানা কাসেম শরীফ।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি পেতে ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।
Leave a Reply