আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের দেশ মোজাম্বিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও এর ফলাফল নিয়ে সহিংসতায় দেশটিতে নৈরাজ্য দেখা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ বিদেশীদের দোকানপাটে আক্রমণসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশির হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
চলমান নৈরাজ্যের কারণে সেখানে ব্যবসাসহ বিভিন্ন কারণে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। জানমাল রক্ষায় তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সাহায্য চেয়েছেন।
মোজাম্বিকে অবস্থানরত কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। আল জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও দেশটিতে সংঘাত ও লুটপাটের খবর এসেছে।
মোজাম্বিকের মেকানহেলা শহরে ব্যবসা করেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মোহাম্মদ রেদোয়ানুর রহমান। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মমতাজ কমার্সিয়াল।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে প্রায় পাঁচ দশক ধরে ক্ষমতায় আছে ফ্রেলিমো নামে একটি দল। গত ৯ অক্টোবর এখানে নির্বাচন হয়। এতে জালিয়াতির অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। কিন্তু সরকারপক্ষ সেটা নাকচ করে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে মোজাম্বিকের শীর্ষ আদালত ক্ষমতাসীন ফ্রেলিমো দলের ড্যানিয়েল চ্যাপোকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করে।
তখন এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী প্রার্থী ভেনানসিও মন্ডলানের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পুলিশ-প্রশাসনের বড় অংশও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে এক হয়ে যায়। এরই সুযোগে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রাজধানী মাপুতোয় বিক্ষোভ ব্যাপক আকারে নিয়েছে। সেখানে এবং তার আশপাশে লুটতরাজও চলছে নির্বিচারে। লুটপাট ঠেকাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা প্রশাসনের কোনো তৎপরতাই চোখে পড়ছে না। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন জানাই, তারা যেন জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের মাধ্যমে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের ব্যবস্থা করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব সীমান্তলাগোয়া দেশ মোজাম্বিকে কতজন বাংলাদেশি থাকেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সেখানে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাসও নেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশ মিশন থেকে সেখানে যোগাযোগ রাখা হয়।
২০১৭ সালের এক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটিতে তখন বৈধভাবে তিন হাজার ৩৪৯ জন ভারতীয় ও এক হাজার ২৫৯ জন পাকিস্তানি ছিলেন। রেদোয়ানুর রহমানের মতে, প্রচুর বাংলাদেশিও দেশটিতে রয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পোস্টে মোজাম্বিক অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দোকানপাট লুটপাটের ভিডিও শেয়ার করতে দেখা গেছে।
মোজাম্বিকে থাকা চট্টগ্রামের বাসিন্দা নিজাম উদ্দীন বলেন, ‘এখানে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। একটা প্রদেশে ৯০ শতাংশের বেশি দোকানপাট লুটপাটের শিকার হয়েছে। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের কাছে সাহায্য চাই। ছাত্র সমন্বয়কসহ সবাই যেন উদ্যোগ নিয়ে আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আফ্রিকা) বিএম জামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মোজাম্বিকে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ মিশন থেকে সেখানের বাংলাদেশিদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সেখানে বাংলাদেশি নাগরিকের হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশিদের বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- দোকানপাট ভাঙচুরও লুটপাট হয়েছে।’
সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পর্তুগিজ উপনিবেশ থেকে ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা লাভ করা মোজাম্বিকে গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে ক্ষমতায় ফ্রেলিমো। তাদের বিরুদ্ধে বিরোধীমত নিপীড়নের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এর মধ্যে গত ৯ অক্টোবর সেখানে নির্বাচন হয়। এতে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনে বিরোধী দলগুলো। তবে দারিদ্র্যপীড়িত মোজাম্বিকের শীর্ষ আদালত ক্ষমতাসীন ফ্রেলিমো দলের ড্যানিয়েল চ্যাপোকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
এর প্রতিবাদে বিরোধী প্রার্থী ভেনানসিও মন্ডলানের সমর্থকরা ২৩ ডিসেম্বর রাতে রাস্তায় নামেন। আন্দোলন রূপ নেয় সহিংসতায়। প্রতিবাদকারীরা পুলিশ স্টেশন, পেট্রোল স্টেশন এবং ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। সড়ক অবরোধ করে তারা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ পেতে পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন।
Leave a Reply